নিজেকে ক্ষমা করেনি তাপস পাল, দাবি স্ত্রী নন্দিনীর
কলকাতা: সফল অভিনেতা হিসেবে পরিচিত হলেও নিজের কিছু ভুল কখনোই ক্ষমা করতে পারেননি তাপস পাল। গতকাল একান্ত সাক্ষাৎকারে তাঁর স্ত্রী নন্দিনী পাল এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তাপস পালের মৃত্যুর পাঁচ বছর পরও নন্দিনীর গলায় স্পষ্ট কষ্টের ছাপ। তিনি জানান, ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের কিছু ঘটনাকে ঘিরে তাপসের মনে গভীর অনুশোচনা ছিল, যা তাঁর শেষ দিন পর্যন্ত তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।
জনপ্রিয়তার উত্থান-পতন
তাপস পালের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ১৯৮০ সালে, তরুণ মজুমদারের ‘দাদার কীর্তি’ সিনেমার মাধ্যমে। তাঁর সহজাত অভিনয় ও ব্যক্তিত্ব দর্শকদের মন জয় করেছিল অতি দ্রুত। পরবর্তীতে ‘সাহেব’, ‘অনুরাগের ছোঁয়া’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’—এর মতো বহু জনপ্রিয় সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ওঠেন তিনি।
![]() |
অভিনেতা - তাপস পাল |
কিন্তু ২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য থাকাকালীন কিছু বিতর্কিত মন্তব্য ও কাজকর্ম তাঁর ভাবমূর্তিতে কালো ছায়া ফেলে। তাঁর নাম জড়িয়ে পড়ে চিটফান্ড সংস্থার দুর্নীতিতে। এই ঘটনাগুলো তাঁকে ভেতর থেকে ক্রমশ গ্রাস করতে থাকে বলে জানিয়েছেন নন্দিনী।
নন্দিনীর দাবি
স্ত্রী নন্দিনী পাল বলেন, “তাপস কখনওই নিজের ভুলকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেনি। সে সবসময় মনে করত, তার কাজের জন্য বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাপস নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনি।”
নন্দিনী জানান, তাপস সবসময়ই নিজের ভুলের ভার বয়ে বেড়াতেন। “তিনি বারবার বলতেন, ‘আমি কি আর আগের তাপস পাল হতে পারব? মানুষ কি আমাকে ক্ষমা করবে?’ এই প্রশ্নগুলো তাঁকে প্রতিদিন কুরে কুরে খেতো,” বলেন নন্দিনী।
মানসিক চাপ ও শারীরিক অসুস্থতা
দুর্নীতির অভিযোগ ও কারাবাসের পর তাপসের শরীর ভেঙে পড়ে। ২০১৬ সালে তিনি স্ট্রোক করেন এবং দীর্ঘদিন অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। পরে ২০২০ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মুম্বইয়ে প্রয়াত হন তিনি।
নন্দিনী বলেন, “তাঁর শারীরিক অসুস্থতার পেছনে মানসিক চাপের বড় ভূমিকা ছিল। অফিসের কাজের চাপে নয়, বরং নিজের প্রতি রাগ আর অপরাধবোধই তাঁকে কুরে কুরে খেয়েছে।”
কন্যার স্মৃতি
তাপস পালের একমাত্র কন্যা সোহিনী পাল, যিনি নিজেও একজন অভিনেত্রী, বলেন, “বাবা সবসময় আমাদের বলতেন, ‘কখনও নিজের ভুলের দায়ভার এড়িয়ে যেও না।’ আমি বাবার কাছ থেকে দায়িত্বশীলতা শিখেছি। তবে ইচ্ছে করে বাবাকে নিয়ে গর্ব করতে চাই, বাবার ব্যর্থতা নয়।”
সোহিনী আরও বলেন, “আমি চাই না কেউ বাবার মতো নিজের ভুলের জন্য এতটা ভেঙে পড়ুক। জীবন চলতেই থাকবে, আর ভুল শুধরানোর সুযোগও থাকবে।”
মনোবিদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞদের মতে, পেশাদার জীবনের চাপ এবং সামাজিক দায়িত্ব অনেক সময় মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। মনোবিদ ডঃ সুদীপ্তা সরকার বলেন, “তাপস পালের মতো বহু মানুষ নিজেদের ভুল নিয়ে বেশি ভাবেন এবং মানসিক অবসাদের শিকার হন। এটি একটি সাধারণ বিষয়, কিন্তু প্রয়োজন সচেতনতার।”
আরও পড়ুন : নিজেকে বদলাতে কী করছেন অভিনেত্রী দেবলীনা কুমার
তিনি বলেন, “মানসিক অবসাদে ভুগলে পরিবারের উচিত ব্যক্তিকে বোঝানো এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া। নিজের প্রতি দয়ালু হওয়া শেখা উচিত, যেমনটা অন্যদের প্রতি আমরা হয়ে থাকি।”
নন্দিনীর বার্তা
তাপস পালের স্মৃতি আজও বাঙালির মনে জাগরুক। তাঁর স্ত্রী নন্দিনী বলেন, “আমি চাই না তাপসের মতো কেউ নিজের ভুল নিয়ে শেষ হয়ে যাক। জীবনে ভুল হবেই, কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। জীবন চলার পথে ক্ষমা, গ্রহণযোগ্যতা এবং ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা।”
তাপস পাল আজ নেই, কিন্তু তাঁর গল্প অনেকের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর জীবন যেন একটি বার্তা দেয়—নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা করা শিখুন, কারণ জীবন একটাই।
![]() |
BREAKING NEWS TODAY'S |
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ