ইরানের হামলায় ইসরায়েলের ‘জৈব দুর্গ’ ধ্বংস: নেস জিওনার গোপন ল্যাবের পতন।
দুনিয়ায় কিছু কিছু জায়গা মানচিত্রে ছোট হলেও ভূরাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব অসীম। ইসরায়েলের এমনই এক শহর নেস জিওনা, যেখানে অবস্থান করত দেশটির অন্যতম গোপন ও উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান — Israel Institute for Biological Research (IIBR)। সম্প্রতি, ইরান থেকে ছোড়া একটি মিসাইল এই গোপন ল্যাবরেটরির ওপর আঘাত হানলে ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
![]() |
ইরানের মিসাইল হামলার পর ইসরায়েলের নেস জিওনারে IIBR ভবনের ধ্বংসাবশেষ। প্রতিকী ছবি। |
মিডিয়ায় নিঃশব্দ, কিন্তু ঘটনাটি ঐতিহাসিক
এই হামলার খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খুব একটা প্রকাশ পায়নি। কারণ একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে সামরিক পদক্ষেপ নেয়, যা খবরের শিরোনামে স্থান দখল করে নেয়। তবে ইসরায়েলি সূত্র ও নিরপেক্ষ কিছু পর্যবেক্ষক নিশ্চিত করেছেন— “নেস জিওনার গোপন বৈজ্ঞানিক ভবনটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।”
কী ছিল এই ল্যাবের ভেতরে?
এই ভবনটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ গবেষণাকেন্দ্র ছিল না। বরং এটি ছিল ইসরায়েলের জৈব যুদ্ধ প্রস্তুতির কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৫২ সালে গোপন সামরিক ইউনিট HEMED BEIT-এর ছায়া থেকে জন্ম নেয় IIBR। এই প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল এমন সব ভাইরাস ও রাসায়নিক উপাদান নিয়ে গবেষণা করা, যা ভবিষ্যতের ‘নীরব যুদ্ধের’ হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
অভিযোগ ও গবেষণার পরিধি
- Anthrax
- Botulinum toxin
- Ricin
- VX nerve gas
ইসরায়েল এ ধরনের মারাত্মক জৈব অস্ত্র নিয়ে গবেষণা করছে বলে বহুবার আন্তর্জাতিক মহলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও রাষ্ট্র কখনোই স্বীকার বা অস্বীকার করেনি।
ইতিহাসে বিতর্কিত অধ্যায়
১৯৯২ সালে El Al বিমানে DMMP রাসায়নিক বহন করার খবর ফাঁস হলে এই গবেষণাগার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশের চাপেই সেই আলোচনা থেমে যায়।
প্রযুক্তি, ঔষধ এবং সামরিক গবেষণার কেন্দ্র
এই গবেষণা কেন্দ্রে তৈরি হয়েছে:
- পোলিও ভ্যাকসিন
- বিস্ফোরক শনাক্তকরণ কিট
- Sjögren’s সিনড্রোমের ওষুধ
- BriLife করোনা ভ্যাকসিন
- মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি প্রযুক্তি
প্রায় ৪০০ জন কর্মী এখানে কাজ করতেন, যার মধ্যে অর্ধেকই ছিলেন PhD-ধারী গবেষক।
জৈব যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগ
IIBR-কে ঘিরে ইসরায়েল বহু কোটি ডলার ব্যয় করেছে। ১৯৯০-এর দশকে Scud হামলার হুমকির পর প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সামরিক গবেষণার বাজেটের বিশাল অংশ এই ল্যাবকে দেওয়া হতো।
ইরানের হামলা: ভবিষ্যতের যুদ্ধ থামিয়ে দিল?
সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পুরো ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। শুধু একটি ভবন নয়, বরং ইসরায়েলের অদৃশ্য প্রতিরক্ষা বলয়ের অন্যতম স্তম্ভ এই ল্যাবের পতন ঘটল। বহু বছরের গোপন গবেষণা, প্রচুর বাজেট এবং বৈজ্ঞানিক পরিশ্রম এক নিমিষেই ধূলিসাৎ।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও অনুপস্থিতি
অবাক করা বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক মিডিয়া এই ঘটনাটি এড়িয়ে গেছে, সম্ভবত মার্কিন জিওপলিটিকাল পজিশন রক্ষা করতেই। তবে কিছু নিরপেক্ষ সংবাদ সংস্থা যেমন এপি (Associated Press) এই ধ্বংসযজ্ঞের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে।
উপসংহার
ইসরায়েলের ‘জৈব দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত এই গোপন ল্যাবের ধ্বংস শুধু একটি হামলা নয়, এটি ভবিষ্যতের ‘নীরব যুদ্ধের’ কৌশলের ওপর চরম আঘাত। বিশ্বের চোখে দেখা যায়নি এই বিস্ফোরণ, কিন্তু ভূ-রাজনীতির মানচিত্রে এটি একটি নীরব বিস্ফোরণ হয়ে থাকবে।
📌 তথ্যসূত্র: Associated Press (AP), DEBKA, Military Watch, Jane's Intelligence
📢 আরও খবর পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন: Breaking News Todays
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ