রাস্তার খানাখন্দে যন্ত্রণা, বাধ্য হয়ে অবরোধের পথে শহরবাসী
সেখ মহাঃ সামিম sms ডেস্কঃ বর্ধমান: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শহরের উল্লাস মোড় থেকে নবাবহাট মোড় পর্যন্ত জিটি রোড সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যায়নের কাজে হাত দিয়েছে পূর্ত দপ্তর। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলেও রাস্তার কাজে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বারবারই নানা কারণে থমকে যাচ্ছে কাজ। কাজ অসমাপ্ত থাকায় দুর্ঘটনাও ঘটেছে। পূর্ত দপ্তরকে জানিয়েও কোনও লাভ না হওয়ায় অবশেষে পথে নামলেন শহরের বাসিন্দারাই।
বুধবার সকাল ১১টা থেকে অবরোধ শুরু হয় অবিলম্বে রাস্তা সারানোর দাবিতে। ব্যস্ত সময়ে জিটি রোড অবরোধ হওয়ায় তীব্র যানজটের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
জিটি রোড সম্প্রসারণের কাজ দেড় বছর আগে শুরু করে পূর্ত দপ্তর। দুই লেন থেকে চার লেনের করা হচ্ছে এই সড়ককে। রাস্তা সম্প্রসারণ করতে গিয়ে বিভিন্ন অংশ খোঁড়া হয়েছে। প্রথম দিকে কাজ দ্রুত গতিতে শুরু হলেও পরে ঢিমেতালে চলতে থাকে। ইদানীং কাজ একেবারেই থমকে গিয়েছে। এর ফলে এই রাস্তা দিয়ে যান চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাস্তার অবস্থা কার্যত বেহাল। চারিদিক এবড়ো-খেবড়ো, গর্তে ভরা। রাস্তার বেশ কিছু অংশে পিচ দেওয়া হলেও আগের পিচের রাস্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় গাড়ি চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন চালকেরা। ছোটবড় দুর্ঘটনা নিত্যসঙ্গী। প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাধ্য হয়েই অবরোধ করেছেন বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। অফিসার্স কলোনির বাসিন্দা মাধবী মণ্ডল বলেন, ‘কী অবস্থা দেখুন রাস্তার? রাস্তার কাজ আর কতদিন ধরে হবে। নরক যন্ত্রণার শেষ কবে হবে সেটা জানতেই আজ আমরা রাস্তায় নেমেছি।’ সড়ক সম্প্রসারণ জেরে ধুলোর দূষণ ছড়াচ্ছে। গৌরব সমাদ্দার নামে আর এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘সহ্যের একটা সীমা রয়েছে। উন্নয়নের নামে লোকের জীবন যাওয়ার অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জিটি রোড এলাকার পাশে থাকা বাড়িঘরের বাসিন্দাদের নাক-মুখ থেকে ধুলো বের হচ্ছে। এইটুকু রাস্তা কতদিন লাগে তৈরি করতে?’
ব্যবসায়ীরাও ক্ষুব্ধ রাস্তার হাল নিয়ে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী রাম ভৌমিক বলেন, ‘আমাদের সুস্থ জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে রাস্তা তৈরির নামে। ব্যবসা করতে পারছি না। দুর্ঘটনা ঘটছে। রাস্তায় জল জমছে। কেউ কিছুই করছে না। বাধ্য হয়েই আমরা অবরোধ করছি।’ স্থানীয় বাসিন্দা কিংবা ব্যবসায়ীরা শুধু নন, দিনমজুররাও সামিল হন বিক্ষোভে। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বাসের মাথায় পণ্য তোলার কাজ করছেন রবি পাসোয়ান। তিনি বলেন, ‘আমাদের পেটে লাথি পড়ছে রাস্তা তৈরির নামে। বহু বাস দাঁড়াচ্ছে না। বাসের ছাদে মাল তুলতে গিয়ে ধুলোয় চোখ-মুখ ভরে যাচ্ছে।’ ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর পরেশ সরকার কাজে ঢিলেমির কথা স্বীকার করেছেন। বলেন, ‘ধীর গতিতে কাজ চলছে বলে মানুষের কষ্ট বেড়েছে। কাজটা দ্রুত গতিতে শেষ হওয়া দরকার।’
অবরোধের জেরে যানজটের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বর্ধমানের ট্র্যাফিক পুলিশের আধিকারিকরা Oc Traffic চিন্ময় ব্যানার্জি ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। আশ্বাস দেন, রাস্তার কাজ শেষ করার ব্যাপারে তাঁরাও কথা বলবেন পূর্ত দপ্তরের সঙ্গে। এই আশ্বাসে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা অবরোধ উঠে যায়। জেলা প্রশাসন মানুষের সমস্যা সম্পর্কে অবগত। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘পূর্ত দপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়রকে বলেছি অবিলম্বে রাস্তা তৈরির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এটা নিয়ে আমরাও বহুবার আলোচনা করেছি। যে ঠিকাদার সংস্থা কাজ করছে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। যদি এরপরেও কাজ না হয় তাহলে আমরা কড়া ব্যবস্থা নেব সংস্থার বিরুদ্ধে।’
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ