কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা: পাকিস্তানের উপস্থিতি টের পেয়ে পিছু হটল ভারতের ৪টি রাফাল যুদ্ধবিমান।
ঘটনার পটভূমি
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর টহল দিতে গিয়ে পাকিস্তানের সামরিক উপস্থিতি দেখে ভারতের চারটি রাফাল যুদ্ধবিমান দ্রুত সরে পড়ে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল, ২০২৫) রাতে এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান বিমানবাহিনী (পিডিএফ)।
![]() |
কাশ্মীর সীমান্তে টহলরত ভারতীয় রাফাল যুদ্ধবিমান; পাকিস্তানি প্রতিক্রিয়ায় ফিরে যায় বিমানগুলো (ছবি: প্রতীকী)। |
পিডিএফ দাবি করেছে, ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলো নিয়ন্ত্রণ রেখা ঘেঁষে টহল দিচ্ছিল। পাকিস্তানের ইউনিটগুলো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানালে রাফাল বিমানগুলো পিছু হটতে বাধ্য হয়।
সরাসরি সংঘর্ষ না হলেও চরম উত্তেজনা
ঘটনার সময় সরাসরি কোনো সংঘর্ষ না হলেও এই পদক্ষেপকে কূটনৈতিক ও সামরিক মহলে গুরুতর বিবেচনা করা হচ্ছে। ইসলামাবাদের একটি নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, যুদ্ধবিমানগুলো ভারতের অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের আকাশসীমায় ছিল, কিন্তু পাকিস্তানি ফাইটার জেটগুলি দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আকাশসীমা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়।
পানিচুক্তি স্থগিত: নতুন মোড়
এই ঘটনার মাত্র কয়েক দিন আগে, ২৩ এপ্রিল ভারত একতরফাভাবে ‘ইনডাস ওয়াটার ট্রিটি’ স্থগিত ঘোষণা করে। উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান এই ঐতিহাসিক পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।
পরদিন পাকিস্তানও কড়া জবাব দেয়—১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি তারা স্থগিত রাখছে এবং ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এই পাল্টা প্রতিক্রিয়াগুলো দুই দেশের সম্পর্কের তিক্ততা আরও বাড়িয়ে তোলে।
সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া
কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি সাম্প্রতিক হামলার জেরে ভারত দাবি করে যে, সীমান্ত পেরিয়ে আসা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ওই ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এর পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ প্রকাশ করা হয়নি।
পাকিস্তান ভারতের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, তারা এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নয়। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ ঘটনায় একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
গোয়েন্দা তথ্য ও সম্ভাব্য সামরিক অভিযান
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আত্তা তারার জানিয়েছেন, তাদের কাছে “বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য” রয়েছে যে, ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে একটি সামরিক অভিযান চালাতে পারে। পেহেলগামের হামলাকে এর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।
তিনি ভারতের মনোভাবকে ‘বিচারক, জুরি এবং কার্যনির্বাহী—তিন ভূমিকায় নিজেকে বসিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা’ বলে কড়া সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন এটি অঞ্চলীয় স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করছে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও শান্তির আহ্বান
এই ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইসলামাবাদ এরই মধ্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
সরকারি বিবৃতিতে পাকিস্তান বলেছে, “আমরাও বহুবার সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছি। এই ব্যথা ও পরিণাম আমরা জানি। শান্তি বজায় রাখা এবং কূটনৈতিক সংযম এখন সময়ের দাবি।”
বিশ্লেষণ: কূটনৈতিক পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক বরাবরই উত্তেজনাপূর্ণ। তবে বর্তমানে কাশ্মীর ইস্যু, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান ও পানি বণ্টন সংক্রান্ত চুক্তিগুলোর স্থগিতকরণ—এই তিনটি ইস্যু পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে। সামরিক উত্তেজনা ছাড়াও রাজনৈতিক কূটনীতির মঞ্চেও চলছে পাল্টা পদক্ষেপের খেলা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি দুই দেশ নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের সামরিক সংঘর্ষ হতে পারে। এতে শুধু ভারত ও পাকিস্তান নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাই ঝুঁকির মুখে পড়বে।
উপসংহার
কাশ্মীর সীমান্তে রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে ঘটনার প্রেক্ষাপট একটি বড় প্রশ্ন তুলছে—এই উপমহাদেশে শান্তি কি আর সম্ভব? যুদ্ধ নয়, প্রয়োজন আস্থা, সংলাপ ও কূটনৈতিক ভারসাম্য। আন্তর্জাতিক মহলকে এখন এই উত্তেজনা প্রশমনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, নইলে সামান্য একটি ভুল পদক্ষেপও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
কীওয়ার্ড: রাফাল যুদ্ধবিমান, ভারত পাকিস্তান সীমান্ত, কাশ্মীর উত্তেজনা, পাকিস্তান বিমানবাহিনী, ইনডাস ওয়াটার ট্রিটি, শিমলা চুক্তি, পেহেলগাম হামলা, সামরিক সংঘর্ষ, আন্তর্জাতিক কূটনীতি
সূত্র: কালবেলা, The Express Tribune
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ