ট্রাম্প-জ়েলেনস্কির উত্তপ্ত বাদানুবাদ, বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট
ওয়াশিংটন, ১ মার্চ ২০২৫: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির মধ্যে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক তীব্র উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। বৈঠকের একপর্যায়ে দুই নেতার মধ্যে বাকবিতণ্ডা এতটাই চরমে পৌঁছায় যে, জ়েলেনস্কি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং তিনি ইউক্রেন সংকট নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছিলেন। অন্যদিকে, জ়েলেনস্কি দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও বেশি সামরিক সহায়তা চেয়ে আসছিলেন, বিশেষত রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।
![]() |
"ট্রাম্প-জ়েলেনস্কির বৈঠকে উত্তেজনা। প্রতিকী ছবি।। |
তবে বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য মধ্যস্থতা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে আরও জোরদার করা। বৈঠকের শুরুতে ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমরা চাই ইউক্রেন ও রাশিয়া শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাক, কিন্তু সেটির জন্য কিয়েভকেও কিছু ছাড় দিতে হবে।”
এই মন্তব্যের পরপরই জ়েলেনস্কি কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "ইউক্রেন স্বাধীন রাষ্ট্র, আমরা আমাদের ভূখণ্ডের ওপর কোনো আপস করব না। শান্তি চাই, তবে শর্তহীনভাবে।"
ট্রাম্প পাল্টা জবাবে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অনেক সহায়তা দিয়েছে, কিন্তু এর বিনিময়ে কি পেয়েছি? ইউক্রেনের উচিত এখন কূটনৈতিক সমাধান খোঁজা।”
জ়েলেনস্কি তখন উত্তপ্ত হয়ে বলেন, “আপনি কি চান আমরা রাশিয়াকে আমাদের ভূখণ্ড দিয়ে দেই? এটি ইউক্রেনের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে।” সুত্রঃ আনন্দ বাজার।
বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান জ়েলেনস্কি
এই বিতর্ক চরমে পৌঁছালে জ়েলেনস্কি হঠাৎই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান। বৈঠকের জন্য নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন।
এই ঘটনা উপস্থিত সাংবাদিকদের নজর কাড়ে এবং বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে জানানো হয়, “আমরা কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাস করি, তবে আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আপস করা সম্ভব নয়।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা জ়েলেনস্কির পাশে থাকার বার্তা দেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমমানুয়েল মাখোঁ বলেন, “ইউক্রেন একা নয়, আমরা তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাশে আছি।”
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, “যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনকে যে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে, তা বন্ধ করার কোনো কারণ নেই।”
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে মন্তব্য করেছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “জ়েলেনস্কি শান্তি আলোচনা এড়িয়ে যেতে চায়, এটি তার বৈদেশিক নীতির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।”
মার্কিন রাজনীতিতে প্রভাব
ট্রাম্পের এই বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে যে, “যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের পাশে আছে এবং আমরা ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত।”
প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেন, “ট্রাম্প আসলে রাশিয়ার হয়ে কথা বলছেন, এটি খুবই বিপজ্জনক।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বৈঠকের ফলাফল ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে নতুন সংকটের মুখে ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনকে সমর্থন কমিয়ে দেয়, তবে ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর আরও বেশি চাপ পড়বে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার পর ইউক্রেন তার পশ্চিমা মিত্রদের আরও বেশি প্রভাবশালী ভূমিকায় দেখতে চাইবে।
ট্রাম্প ও জ়েলেনস্কির এই বৈঠক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এই ঘটনা মার্কিন রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, দুই দেশের সম্পর্ক কোন পথে এগোয় এবং ইউক্রেন তার সামরিক সহায়তার জন্য আর কী পদক্ষেপ নেয়।
"মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বাদানুবাদ। বৈঠকের মাঝপথেই কার্যত সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান জ়েলেনস্কি এই প্রতিবেদনে আপনার কিছু মতামত থাকলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। এইভাবেই আমাদের খবরে সাইটে পাশে থাকবেন।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ