অবশেষে চাপে পড়ে শুল্ক কমাতে সম্মত ভারত, দাবি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটন, ৮ মার্চ ২০২৫: দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাণিজ্যিক উত্তেজনার পর অবশেষে ভারত শুল্ক কমানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের মতে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আরোপিত কিছু আমদানি শুল্ক হ্রাস করতে রাজি হয়েছে, যা দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেবে।
ট্রাম্পের বক্তব্য:
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের শীর্ষ নেতা ও আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অন্যতম প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার রাতে এক নির্বাচনী প্রচারণা সভায় বলেন, "ভারত এতদিন ধরে আমাদের প্রতি অবিচার করে আসছিল। তারা আমাদের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছিল, যা একেবারেই অন্যায্য। আমরা শক্ত অবস্থান নেওয়ার পর অবশেষে তারা শুল্ক কমাতে সম্মত হয়েছে।"
![]() |
"ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য শুল্ক বিরোধের - প্রতীকী ছবি।" |
ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। তবে ভারতের সরকারিভাবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
বাণিজ্য বিরোধের পটভূমি:
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকার সময় থেকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক টানাপোড়েন শুরু হয়। ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক বসানোর পর ভারত পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে মার্কিন কৃষিপণ্য, মেডিকেল ডিভাইস ও প্রযুক্তি সামগ্রীর ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে।
২০১৯ সালে ট্রাম্প ভারতকে দেওয়া "জেনারালাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সেস" (GSP) সুবিধা বাতিল করেন, যার ফলে ভারতীয় বহু পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার হারায়। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েন চলছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া:
ভারত সরকার ট্রাম্পের দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কয়েক মাস ধরে আলোচনার পর কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের শুল্ক কমানোর বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। তবে একে চাপে পড়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত বলতে রাজি নয় নয়াদিল্লি।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করেই প্রতিটি বাণিজ্য চুক্তি করি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।"
কোন কোন খাতে শুল্ক কমতে পারে?
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত নিম্নলিখিত পণ্যে শুল্ক কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে:
- মার্কিন কৃষিপণ্য: বিশেষ করে বাদাম, আপেল ও ডেইরি পণ্য।
- মেডিকেল ডিভাইস: স্টেন্ট ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী।
- টেক পণ্য: স্মার্টফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যে শুল্ক হ্রাস হতে পারে।
তবে ভারতীয় স্টিল ও টেক্সটাইল খাতে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় ভারত।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ কী?
যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত তার বাজার আরও উন্মুক্ত করুক, বিশেষ করে কৃষিপণ্য ও প্রযুক্তি খাতে। আমেরিকান কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন, ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করতে গেলে তাদের বেশি শুল্ক দিতে হয়। ট্রাম্প প্রশাসন এটি নিয়ে বহুবার আপত্তি তুলেছে।
আরও খবর পড়ুনঃ ট্রাম্পের ঘোষণা: ভারত ও চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক, বিশ্ববাণিজ্যে নতুন উত্তেজনা
রাজনৈতিক প্রভাব:
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাওয়া ট্রাম্প বাণিজ্য নীতিতে তার দৃঢ় অবস্থানের কথা প্রচার করতে চান। তিনি ভোটারদের বোঝাতে চাইছেন, তার নীতির কারণে ভারত শুল্ক কমাতে বাধ্য হয়েছে।
বিশ্ব বাণিজ্যে এর প্রভাব:
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা বাড়বে। তবে ভারত যদি শুল্ক কমায়, তাহলে অন্যান্য দেশও একই দাবি করতে পারে, যা ভারতের অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
উপসংহার:
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে এটি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় হতে পারে। তবে ভারত সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বোঝাপড়া কেমন হয়, তা আগামী দিনে স্পষ্ট হবে। তবে নিশ্চিতভাবেই এটি ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
আপডেট পেতে, আমাদের সাথেই থাকুন ! পাশে থাকুন ৷ খবরের সাথেই থাকুন ! Breaking News Todays সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি: Facebook, Facebook page, Whatsapp Group.
0 মন্তব্যসমূহ